build your own website for free

কাঁথি মডেল ইনস্টিটিউশন 

 "সেদিন থেকে এদিন"

১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দ- ভারতের ইতিহাসে এক উল্লেখ্যযােগ্য লগ্ন। সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত আনন্দমঠ প্রকাশিত হল। আনন্দমঠ উপন্যাসের ‘বন্দেমাতরম সঙ্গীত' সারা দেশের আপমর জনসাধারনকে আলােড়িত করে তুলল। 'বন্দেমাতরম' মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে দেশপ্রেমিক নেতৃবৃন্দ দেশমাতৃকাকে বিদেশী ব্রিটীশ শক্তির নাগপাশ থেকে মুক্ত করার জন্য দিকে দিকে বিভিন্ন সভা সমিতি গঠন করে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন গড়ে তুললেন। 


এইরূপ এক ঐতিহাসিক ভাব পরিমন্ডলে সর্ব শ্রেণীর মানুষের কাছে দেশীয় ভাষা শিক্ষার সুযােগ পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে সাধারন মানুষজনের কথা চিন্তা করে কাঁথির ‘পুলবন্দি (সেচ বিভাগ) অফিসের কোষাধ্যক্ষ বাবু পদ্মলােচন মহাশয় তদানীন্তন ব্রিটীশ সরকার ও উচ্চবিত্ত ব্যাক্তিবর্গের আর্থিক আনুকূল্য ছাড়াই একক প্রচেষ্ঠায় এলাকার কিছু বিদ্যোৎসাহী মানুষের সহানুভূতিকে মূলধন করে ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দের ৩রা সেপ্টেম্বর কাঁথি মডেল ইনস্টিটিউশন প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠালগ্নে বিদ্যালয়ের নাম "কাঁথি মডেল ইনস্টিটিউশন" ছিল না। তখন নামকরন করা হয়েছিল- "কাঁথি বঙ্গ বিদ্যালয়"। 

দেশীয় ভাষায় শিক্ষা দেওয়াই যে বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা ও তৎকালীন বিদ্যোৎসাহীদের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল, তার প্রমান কাঁথি বঙ্গ বিদ্যালয় এই নামকরণটির দ্বারা সূচিত হয়। তখনকার সরকারী সাহায্য বঞ্চিত এই বিদ্যালয়ের পথ চলা শুরু মাত্র ২৫ জন ছাত্র নিয়ে। তখন হেড-পন্ডিত হিসাবে দায়িত্বভার গ্রহন করেন মধুসূদন জানা মহাশয়। ১৮৩৩ খ্রিষ্টাব্দের ২০শে নভেম্বর তদানীন্তন বিদ্যালয় সমূহের পরিদর্শক শ্ৰীযুত গণেশচন্দ্র ভট্টাচার্য মহাশয়ের মন্তব্য বিশেষ ভাবে প্রণিধানযােগ্য- “এই কাঁথি এবং ইহার চতু: সীমা ২-৩ ক্রোশের মধ্যে একটিও ‘বাংলা বিদ্যালয় না থাকায় আপমার সাধারন দু:স্থ বালকগনের বড়ই অসুবিধা হইতেছে, এই বিদ্যালয়টির দ্বারা তাহা অপনয়ন হইবে, অতএব এটি সাধারনের যত্নের ধন। 

কাঁথি মডেল ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বভার গ্রহন করলেন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র, আদর্শ শিক্ষাব্রতী সাহিত্যনুরাগী গজেন্দ্রনাথ গুচ্ছাইত মহাশয়। বিদ্যালয়ের অগ্রগতিতে এল জোয়ার। বিদ্যালয়ের সুনাম কেবল মহকুমা নয়, ছড়িয়ে পড়ল সারা জেলায়। 

পরবর্তী সময়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষাদান কার্যে যুক্ত হলেন দেশপ্রেমিক কৃতবিদ্য শিক্ষকবৃন্দ। এদের মধ্যে ঈশ্বরচন্দ্র মাল, প্রথমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, অঘােরচন্দ্র দাস, পাঁচুগােপাল ঘােষ প্রমুখের নাম বিশেষভাবে স্মরণযােগ্য। 

১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে ভারতছাড়াে আন্দোলনের ঢেউ এসে লাগল কাঁথিতেও। অত্যাচারী ইংরেজ শাসক এই আন্দোলনকে দমন করার জন্য কুখ্যাত ‘টমি' নামক সৈন্যদল আমদানি করল। টমি সৈন্যরা আস্তানা গাড়ল বিভিন্ন স্কুল-কলেজে। এই বিদ্যালয়ও বাদ গেল না। ফলে বিদ্যালয়ের পঠন-পাঠন সাময়িক ভাবে বন্ধ হয়ে গেল। অপরদিকে ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে সমুদ্রোপকূলবর্তী এলাকার উপর দিয়ে প্রবল ঘূর্ণির্বাত্যা, সামুদ্রিক জলােচ্ছ্বাসের ফলে দেখা দিল দুর্ভিক্ষ ও মহামারী। এরূপ প্রতিকূল অবস্থাতেও বিদ্যালয়ের কর্ণধার আচার্য গজেন্দ্রনাথের নেতৃত্বে ত্যাগব্রতী শিক্ষকবৃন্দ নতুন উদ্যমে বিদ্যালয়টিকে পুনর্গঠন করলেন। 

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই আগস্ট দেশ স্বাধীন হল। ১৪৪৯ খ্রিস্টাব্দের ১৮ই এপ্রিল তদানিন্তন শিক্ষা অধিকর্তা এই বিদ্যালয় পরিদর্শন করে মন্তব্য করলেন-“The school appears to be a popular one and I understand that it has already grown bigger than the older institution." বিদ্যালয় নব উদ্যমে এগিয়ে চলল। 

১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে আচার্য গজেন্দ্রনাথের অবসর গ্রহনের পর প্রধান শিক্ষকের দ্বায়িত্বভার গ্রহন করলেন শ্ৰীযুত যতিন্দ্রনাথ চক্রবর্তী মহাশয়। তারই অক্লান্ত প্রচেষ্টা ও বিদ্যালয়ের পঠন-পাঠন ও সন্তোষজনক পরীক্ষার ফলাফলেই বিদ্যালয়টি ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে একাদশ শ্রেণীবিশিষ্ট ‘বহুমুখী বিদ্যালয় হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করল। 

১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে যতীন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর স্থলাভিষিক্ত হলেন শ্ৰীযুত চিত্তরঞ্জন জানা মহাশয়। এরই সুযােগ্য পরিচালনায় ও প্রচেষ্টায় বিদ্যালয়ের সুনাম বৃদ্ধির সাথে সাথে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিক্ষাবিভাগ কর্তৃক ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে ‘কাঁথি মডেল ইনস্টিটিউশন কাঁথির একমাত্র দ্বাদশ শ্রেণী বিশিষ্ট উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করল। এ প্রসঙ্গে তদানীন্তন সম্পাদক শ্রীযুত খগেন্দ্রনাথ শাসমল মহাশয়ের প্রচেষ্টা ও সহযােগিতা অবিস্মরণীয়। 

ইতিহাসের রথের চাকা সদা চলমান কোন বাধা-বিপত্তি তাকে স্তব্ধ করে দিতে পারে না। তার প্রমাণ এই বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে সার্থক ভাবে প্রমাণিত হয়েছে। ১৩৮ বছর অতিক্রান্ত এই বিদ্যালয়ে বর্তমানে কলা-বাণিজ্য-বিঞ্জান বিভাগ সহ আধুনিক কম্পিউটার শিক্ষা, স্পােকেন ইংলিশ চালু রয়েছে। শিক্ষা জগতের মানচিত্রে রাজ্যস্তরে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বিদ্যালয়ের সাফল্য অব্যাহত রয়েছে। 

"सा विद्या या बिमुक्तये"

  • Index No: V2-051
  • H.S Code: 105057
  • (Science, Arts & Commerce)

  • Developed By Mir Rahed Uddin 
  • EX Student

  • © Copyright 2022
  • All Rights Reserved